আপনি কি এসি কেনার কথা ভাবছেন? কিন্তু  মনে রাখবেন এসি বাসার অন্য সব যন্ত্রের মত নয়। এসি কেনার আগে কিছু গুরুতপূর্ন বিষয় না জেনে  ক্রয় করলে  তা দূর্ভোগের কারন হতে পারে ।তাই আপনার ঘরের জন্য কোন এসিটি সবচেয়ে উপযোগী সেটি বেছে নেয়ার জন্য নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখুন-

১. এসির আকার-

যদি মনে করে থাকেন যে একটি ছোট রুমকে ঠান্ডা রাখতে বড় এসি কিনতে হবে তবে  এটি ভুল ধারনা। অধিক ক্ষমতা বা ক্যাপাসিটির এয়ার কন্ডিশনারের দাম তুলনামুলক অনেক বেশি হয় ।   এবং প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ঠাণ্ডা প্রদান করে ।আবার তেমনি একটি ছোট এসি দ্রুতই রুম ঠাণ্ডা করতে পারে না ।  তাই এসির কম্প্রেসার কিছুক্ষণ পরপর চালু হয় ।  এবং লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে ।  ফলে, বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে, কিছু দিনের  মধ্যে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে  এবং  কম্প্রেসার দ্রুত নষ্ট হয়, । প্রয়োজন অনুযায়ী রুমকে ঠাণ্ডা করতে পারে না ।

ঘরের মাপ অনুযায়ী কত টনের এসি প্রয়োজন তা নির্ধারন করতে হয়। নীচের তালিকাটি ঘরের আকৃতির সাথে এসির আকার এর আদর্শ তালিকা-

ঘরের মাপ (স্কোয়্যার ফিট)কত টনের এসি
৮০ থেকে ১২০                 ১.০ টন
১২১ থেকে ১৮০                 ১.৫ টন
১৮১ থেকে ২২০                 ২.০ টন
২২১ থেকে ২৬০                 ২.৫ টন 
২৬১ থেকে ৩২০                 ৩.০ টন
৩২১ থেকে ৩৮০                  ৪.০ টন
৩৮১ থেকে ৪৪০                 ৫.০ টন

ঘরের আকৃতি এর থেকেও বড় হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন বা কোন ব্রান্ডের শোরুমে গিয়ে কথা বলুন । তারা ঘরের আকৃতি বিবেচনায় রেখে সঠিক পরামর্শ দিবেন।


২.  ব্র্যান্ড-

এয়ার কন্ডিশনারের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের ভূমিকার গুরুত্ব আপনি যতটুকু মনে করেন আসলে তার চেয়েও বেশি।যখন আপনি  একটি এসি কেনার সিদ্ধান্ত নিবেন তখন আপনি অবশ্যই চাইবেন যে আপনার এসিটি অনেকদিন চলুক, এবং আপনার প্রয়োজনের সময় যাতে সেটি নষ্ট হয়ে না যায়। উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের মধ্যে General, LG, Whirpool, Sharp, Panasonic অনেকদিন ভাল সার্ভিস দেয় ।  যদি সঠিকভাবে যত্ন, পরিস্কার  এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।  এইসব ব্র্যান্ডের এসির দাম একটু বেশি হলেও এটা মাথায় রাখতে  হবে যে অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে এরা ২ গুণ বেশি সময় ধরে সার্ভিস দেয়ার সক্ষমতা রাখে। এছাড়াও এই ব্র্যান্ডগুলোর এসির রি-সেল ভ্যালুও অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে বেশি। তবে কমদামের মধ্যে যারা এসি খুজছেন তাদের জন্য  Media এসি একটি ভাল চয়েজ হতে পারে ।
দেশি ব্রান্ডের মধ্যে walton, vision, jamuna ইত্যাদি ভাল এসি । তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য ওয়ালটন এসিতে পানি পড়া একটি বড় সমস্যা । যারা ওয়ালটন এসি কিনবেন তারা অবশ্যই এই বিষয় টি মাথায় রাখবেন ।   

৩.বাজেট- 

কম দামি অনেক এসি হয়ত আপনার নজর কাড়বে, তবে কেনার আগে ভালভাবে বিবেচনা করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কোন ব্র্যান্ডের এসি কেনা হবে, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে এসির মূল্য। ৷ ব্রান্ড, ধরন, ক্ষমতা এবং মানভেদে  ১ টন এসির জন্য ৩০ হাজার টাকা ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে  থাকে । ১.৫ টন এসির জন্য ৩৩ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ১০ হাজার পর্যন্ত হয় ।  ২.০ টন এসির জন্য ৪৩  হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে ।২.৫ টন এসির জন্য ৭০  হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে ।

৪.ফিচার-

উন্নত  ব্র্যান্ডের এসিগুলিতে ভালো এয়ার ফিল্টার বিল্ডইন অবস্থায় থাকে। এসি কেনার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। যে এসি ক্রয় করা হচ্ছে তাতে যেন একটি অ্যাডজাস্টেব্‌ল থার্মোস্ট্যাট, দু’টি কুলিং স্পিড এবং কমপক্ষে দু’টি ফ্যান স্পিড থাকে যাতে ঘরের তাপমাত্রা অনুযায়ী ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।তবে এটিই এসির একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ফিচার নয়। এসির অনেকগুলো ফিচারের উপর খেয়াল করা দরকার, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের মধ্যে একটি হল এনার্জি রেটিং। এটি দিয়ে ইইআর নাম্বারের সাহায্যে এসি কতটুকু কার্যকর তা পরিমাপ করা হয়। ইইআর নাম্বার যত বেশি হবে, এসি তত বেশি কার্যকরী হবে। এনার্জি স্টার লেবেল দেখে এসির এনার্জি রেটিং কত তা জেনে নিন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল টাইমার। টাইমারের মাধ্যমে একটি এসি টানা কতক্ষন চলবে তা আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন এবং এতে করে আপনার প্রচুর ইলেকট্রিসিটি বিল বাঁচবে। ডিরেকশনাল এয়ারভেন্ট-সহ এসি খুঁজুন। এয়ারভেন্ট আপনার ঘরের চারপাশে বাতাস ছড়িয়ে দিতে পারবে যা আপনার ঘরকে দ্রুত ঠাণ্ডা করে তুলবে।

৫. এসির ধরন-

মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের এসি পাওয়া যায় । আপনি আপনার প্রয়োজন, আর্থিক বাজেট এবং সুবিধা বিবেচনা করে এসি  কেনার সিদ্ধান্ত নিন । 

ক) ড্যাক্টলেস, মিনি-স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার- এই ধরনের এসি সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে । বাজারে বিভিন্ন দামের এবং মানের এসি পাওয়া যায় ।

ইনভার্টার নাকি নন ইনভার্টার-  এসির কমপ্রেশার কম ক্যাপাসিটিতেও চলতে পারে তাই সাধারণ নন ইনভার্টার এসির থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এই এসি।কোম্পানিগুলি দাবি করছে যে ইনভার্টার এসি ব্যবহার করলে সাধারণ নন ইনভার্টার  এসির থেকে  প্রায় ৩০ থেকে ৫০ শতাশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। তবে সাধারনভাবে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম খরচ হয় ইনভার্টার এসিতে।

খ) উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার-  জানালার মত দেখায় বলে এই এসির নাম উইন্ডো এসি । এই এসি এক সময় সব থেকে বেশি জনপ্রিয় ছিল এবং এখনও অধিকাংশ জায়গায় এই এসি ব্যবহৃত হয় ।

গ)  পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনার – এই এসির সাথে এক ধরনের ফ্লেক্সিবল এক্সহস্ট পাইপ থাকে যা জানালা বা দেয়ালে ছিদ্র করে ঘরের বাইরের দিকে নিতে হয়।  পোর্টেবল এয়ার কন্ডিশনারের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। 

এই এসি বেশ এনার্জি এফিসিয়েন্ট হওয়ায় এবং পোর্টেবল অর্থাৎ সহজে বহনের সুবিধা থাকায়, এগুলো অনেকের জন্যই দারুণ কার্যকরী। অন্যান্য  এসির তুলনায় এই এসির দাম কিছুটা কম ।

ঘ) সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং- আমাদের দেশে বড় শপিং মল,  হাসপাতালে, অফিস, কমার্শিয়াল জায়গায় এই ধরনের এসি ব্যাবহার করা হয় । বড় স্পেসের জন্য এই এসি আদর্শ ।

ঙ) হাইব্রিড এয়ার কন্ডিশনার –  সোলার প্যানেল থেকে এনার্জি উৎপাদন করে এই এসি চলে । এই ধরনের এসি পরিবেশ বান্ধব । তবে এই ধরনের এসি আমাদের দেশে পাওয়া যায় না । 

৬. ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস-বিক্রয় পরবর্তী সেবা যে কোনো হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়। সুতরাং  এসি ক্রয়ের পূর্বে কোম্পানির সেবা কতটা উপযোগী সে বিষয়ে ভালো করে জেনে নেয়া প্রয়োজন।। তবে যে এসি বা এয়ার কুলারই কিনুন না কেন, ভালো করে দেখে নিতে হবে, সেই  শীতাতপ যন্ত্রটি বিদ্যুতের সাশ্রয় করতে কতটা সক্ষম।