এয়ার কন্ডিশনার এমন একধরনের যন্ত্র যা রুমকে ঠান্ডা রাখে এবং রুমের অভ্যন্তের থেকে তাপ এবং আর্দ্রতা অপসারণ করে । ঢাকার মত ইট পাথরের এই শহরে অসহনীয় গরম থেকে মুক্তি পেতে এসির কোন তুলনা নেই । কিন্তু কে এবং কি ভাবে এই যন্ত্রটি আবিস্কার হল তা আমাদের অনেকেরই অজানা । তাই চলুন জেনে নেই এসির সূচনা ।
প্রাথমিক পর্যায়ে খাবার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা থেকে এয়ার কন্ডিশনারের ইতিহাস শুরু হয়েছিল। ঘরের তাপমাত্রায় রাখা খাবারগুলি ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমনের কারনে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। 4°C (40°F) এর নীচে তাপমাত্রায়, ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি দ্রুত হ্রাস পায়। 1824 সালে রেফ্রিজারেশনের নীতিগুলির আবিষ্কার থেকে প্রমাণিত হয়েছিল যে তরলযুক্ত অ্যামোনিয়া বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বাতাসকে শীতল করতে পারে । 1842 সালে জন গরি নামে একজন চিকিৎসক কমপ্রেসার ব্যবহার করে রেফ্রিজারেটর তৈরি করেছিলেন।
প্রথম বৈদ্যুতিক এয়ার কন্ডিশনার ১৯০২ সালে উইলস হাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার আবিষ্কার করে এবং ১৯০৬ সালে পেটেন্ট লাভ করে। তিনি আধুনিক এসির জনক হিসাবেও পরিচিত । এসি মূলত শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা শুরু হয়েছিল।
মূলত কর্মক্ষেত্রের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিনি এসি আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯১৫ সালে আরো ছয় প্রকৌশলীসহ তিনি ৩২ হাজার ৬০০ ডলার খরচ করে ‘ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আজ, ক্যারিয়ার কর্পোরেশন বিশ্বের বৃহত্তম এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারক । তারা ১৯১৬ সালে শিকাগোর একটি গরুর খামারে প্রথম এসি বসান। ১৯২৬ থেকে বাসাবাড়িতে এসি ব্যবহার শুরু হয়।
প্রথম তাঁর আবিষ্কারটি একটি মুদ্রণ কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। কাগজের আকার এবং কাগজ ছাপার কালির সঠিক ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে এসি ব্যাবহার করা হয়েছিল।অ্যামোনিয়া, প্রোপেন এবং মিথাইল ক্লোরাইডের মতো বিষাক্ত এবং জ্বলনীয় গ্যাসের এসিতে ব্যাবহার করা হত । কিন্তু থমাস মিডগলি, জুনিয়র মানুষের কাছে নিরাপদ স্নিগ্ধকারী পদার্থ দিয়ে, ১৯২৮ সালে ফ্রেওনের আবিষ্কার আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজের জন্য এসি উদ্ভাবন করে।
১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার মারা গেলেও থেমে থাকেনি ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯৭৯ সালে আমেরিকার ‘ইউনাইটেড টেকনোলজিস’ ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কিনে নিলেও ব্র্যান্ডের নাম বদলানো হয়নি। ১৭০ টি দেশে ক্যারিয়ার বাজারজাত করে থাকে । বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় 75 শতাংশ বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার রয়েছে । এবং বাংলাদেশেও বিভিন্ন ব্রান্ডের এসি কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে । তাই এসি ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ।
দুর্ভাগ্যক্রমে,CFC এবং HFC গ্যাসগুলি ব্যবহারের ফলে আমাদের বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর হ্রাস পাচ্ছে যা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিগুলিকে আমাদের পৃথিবীতে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। R-11, R -12 এবং R-22 গ্যাস যা এসিতে ব্যবহার করা হয়, এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর । তবে R -410 গ্যাস নতুন এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়েছে যা পরিবেশে বান্ধব ।
আজকের এয়ার কন্ডিশনার খুব সহজে কিংবা একবারেই আবিস্কার হয়ে যায় নি । কিভাবে তা পর্যায়ক্রমে আবিস্কার হয়েছিল তা নিচে উল্লেখ করা হল ।
1820ঃ প্রথম কৃত্রিমভাবে পরীক্ষামূলক বরফ তৈরি করা হয়েছিল।
1824ঃ মাইকেল ফ্যারাডে রেফ্রিজারেশনের শোষণের নীতি আবিষ্কার করেছিলেন।
1834ঃ জ্যাকব পারকিন্স প্রথম কৃত্রিম বরফ উৎপাদনের মেশিন আবিষ্কার করেছিলেন যা আমাদের আধুনিক সংকোচন সিস্টেমগুলির দিকে পরিচালিত করেছিল।
1902ঃ উইলিস হাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার একটি মুদ্রন সংস্থার তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথম এসি উদ্ভাবন করেছিলেন, চারপাশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমবারের মত প্রচেষ্টা করা হয় ।এর মাধ্যমে এসির ইতিহাস শুরু হয়
1906ঃ স্টুয়ার্ট ডব্লু ক্রেমার “এয়ার কন্ডিশনিং” শব্দটি প্রকাশ করেছেন। যা পরে কেরিয়ার গ্রহণ করেছিল।
1913ঃ প্রথম আন্তর্জাতিক রেফ্রিজারেশন এক্সপো শিকাগোতে অনুষ্ঠিত হয়।
1928ঃ টমাস মিডলেগি জুনিয়র ফ্রায়ন ফ্রিজের আবিষ্কার করেছিলেন।
1930ঃ হোয়াইট হাউস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল।
1946ঃ এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা বাড়তে শুরু করায় এই বছর 30,000 বেশি ইউনিট উৎপাদন করা হয় ।
1953ঃ এয়ার কন্ডিশনার বিক্রয় ১০ লক্ষ ইউনিট ছাড়িয়ে ছিল। এটি এয়ার কন্ডিশনারের ইতিহাসের আর একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়
1953ঃ রেফ্রিজারেশন ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাস্টুরেরস এসোসিয়েশন এবং এয়ার-কন্ডিশনিং এন্ড রেফ্রিজেরেটিং মেশিনারী এসোসিয়েশন গঠিত হয়।
1957ঃ এয়ার কন্ডিশনারকে আরও ছোট এবং শক্তিশালী করতে প্রথম রোটারি কম্প্রেসার তৈরি করা হয়েছিল।
1977ঃ গরমের সময় ঠাণ্ডা এবং শীতের সময় গরমের জন্য হিট পাম্প তৈরি করা হয়েছিল।
1990ঃ এয়ার কন্ডিশনারে মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।
1992ঃ পরিবেশ বান্ধব এসির গ্যাসের জন্য অল্টারনেটিভ রেফ্রিজারেশন এভালুয়েশন প্রোগ্রাম শুরু হয় ।
1995ঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি) উৎপাদন 31 ডিসেম্বর শেষ হয়।
1998ঃ উনিটারি এয়ার কন্ডিশনার 6 মিলিয়নের বেশি ইউনিট বিক্রয় রেকর্ড করে ।
এয়ার কন্ডিশনার সারা পৃথিবীর চিত্র বদলে দিয়েছে । এখনকার সময় শিল্পক্ষেত্র, অফিস, এসি ছাড়া চিন্তাই করা যায় না । প্রথম পাবলিক ব্যবসায় হিসেবে সিনেমা হল এসির ব্যবহার করা হয় । পৃথিবীর গরম প্রধান দেশ গুলোতে এসি ছাড়া জীবনযাপন করা খুবই কঠিন । এয়ার কন্ডিশনার বৈশ্বিক এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে । আগে গ্রীষ্ম কালে অফিসে বসে কাজ করা খুবই কঠিন ছিল তাই লম্বা গ্রীষ্ম কালীন ছুটি দেয়া হত। এখন, গ্রীষ্মকালে আমরা এসি ব্যবহারে করে রুমের ভিতরে কাজ করতে পারি । যা উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে বুহুগুনে ।তাই এসি কে বিংশ শতাব্দীর এক মাইল ফলক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
গরমে এসিতে common কিছু সমস্যা হয়ে থাকে যেমন ঠাণ্ডা কমে যাওয়া, ভিতরে শব্দ হওয়া, এসি থেকে পানিও পড়া । তাই এই ধরনের ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজন নিয়মিত এসি Clean করা । তাই দেরি না করে আজই এসি Master Clean করুন এবং ফ্রি চেক আপ সার্ভিস নিন । আমাদের রয়েছে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান । আমরা অত্যাধুনিক মেশিন ব্যাবহার করে এসি master clean করে থাকি ।